দ্বিতীয়ঃ
আজ সকালের কাগজটা বীণাদেবী দেখে উঠতে পারেন নি কাজের তাড়ায়। সকালে দুধওয়ালা আসে নি, বিকেলের দিকে মনে হয় স্টেশনের কাছের দোকানটায় যেতে হবে। মাঝে মাঝে বেরলে রাস্তা চিনতে অসুবিধে হয় আজকাল বীণাদেবীর।
গুলিয়ে যায় হঠাৎ দেখা বাড়িগুলোর মাঝে হারিয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো। আজ বারো বছর হয়ে যেতে চলল এ পাড়ায় তাঁর; রাস্তার হলুদ আলোগুলো বাদ দিলে বাকি সারা পাড়াটাই লুডোর ছকের মত দান পাল্টে আসছে বরাবর।
বারো বছর আগের একদিনের কথা সন্ধ্যার মুখে মনে পড়ে যায় বীণাদেবীর। বেশ দূরেই থাকতেন তখন এখান থেকে। অলোক তখন সদ্য নতুন চাকরিতে ঢুকেছে বিয়ের বছর পাঁচেকের মাথায়। দুজন মিলিয়ে সামান্য সংসার। নুন শেষ হওয়ার আগে হলুদের কৌটোয় টান পড়ত। সেখান থেকে বাড়িতে ছোট একটা ফ্রিজ, এক সেট কাঁচের বাসন, আর ধোপা-মুদি-ওষুধের দোকানের হিসেব থেকে সরিয়ে টাকা জমিয়ে কেনা একটা ট্রানজিস্টার রেডিও।
গান শেখার শখ বীণার ছোটবেলা থেকেই ছিল। ছোটকাকা অসামান্য গাইয়ে ছিলেন দিনে কালে। অল্প বয়সে তালিম শুরু ঘর থেকেই। বীণার ছোটবেলাটা কেটেছে বাবার ওকালতির মস্ত লাইব্রেরির মধ্যে। আর গান-বাজনা।
ছোটবেলা! মনে মনে হাসেন বীণাদেবী। ছোটই ছিলেন উনি। অলোকের সাথে দেখা হওয়ার আগে।
কিভাবে অলোক এসে পড়ল তাঁর জীবনে, চেষ্টা করেও আর মনে করতে পারেন না তিনি। কোনদিন সন্ধ্যায় কি বই কিনতে গিয়ে দেখা হয়েছিল? সেখান থেকে কিভাবে অলোক বইমেলা থেকে হাত ধরে বাড়িতে এসে পৌঁছল, আজ তা একটা দুরহ ধাঁধার মত ঠেকে বীণার। কেবল মাঝে মাঝে মনে পড়ে বাবার বলা শেষ কথাগুলো, “নিজের বাবা-মায়ের ওপর যখন ভরসা করতে পারলে না, তখন আর কি হবে এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে বিনু? আমার মত নেই। ছেলেটিকে কি বলবে তা নিজে ঠিক করে নাও। বাড়ির মান সম্মান, কালচার, এথিক্স কোনটাই তোমার অজানা নয়।”
অলোককে চোখেও দেখেন নি বাবা। মায়ের বারবার অনুরোধ করাতেও নয়।
বয়স কম ছিল বীণাদেবীর। অভিমান ঠেলে বাবাকে কোনদিনই স্পষ্ট দেখতে পাননি তিনি। বোধহয় সেজন্যই একদিন একটা ব্যাগ গুছিয়ে পৌঁছলেন বরানগর স্টেশনে। ট্রেন ধরে শিয়ালদা। সেখান থেকে শিবপুর। বীণা-অলোকের নতুন সংসার আলো হয়ে উঠল।
চশমার একদিকের ডাঁটিটা সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ঠিক করতে করতে মনে ভিড় করে নতুন ঘর-ঘর খেলার সেই দিনগুলো। অলোকের জন্য নোনতা সুজি করতে ভালবাসতেন বীণা। উনুন ধরাতে গিয়ে পুরনো খবরের কাগজ বের করার সময় একটা ছোট্ট খবর মাঝে মাঝে চোখে পড়ত তাঁর।
“বিনু, তুমি ফিরে এস। মা শয্যা নিয়েছেন। একবার দেখে যাও। - তোমার বাবা এবং দাদা”
নিচে বীণাদের বিখ্যাত ল’ফার্মের নাম।
বীণার মনটা ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেলেও ফিরে যেতে পারেন নি। জানতেন, মস্ত নামটার নিচে অলোকের মত একটা সামান্য মানুষের সামর্থ্য খুব সহজেই চাপা পড়ে যাবে। মায়ের ঘাটকাজের দিন অলোককে লুকিয়েই একরকম নিমতলা গিয়েছিলেন বীণা। শেষ দেখাটুকু দেখতে। দূর থেকে আলতারাঙা পা দুটো ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে নি। আর বাবার বুকফাটা আর্তনাদ!
কিভাবে একটু একটু করে পাল্টে গেল অলোক চোখের সামনে। কাঁচের ডিনারসেটটার পাশে একে একে জায়গা করে নিল যমের দুয়ারের মত পেতলের অ্যাশট্রে আর একটা গ্লাস। বিছানা আলাদা হয়েছিল বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যেই। একটু একটু করে মিলিয়ে গেল একসাথে নেয়া হাঁড়ির চালও। সপ্তাহে দু’বার বাড়ি আসত অলোক। গোগ্রাসে গিলে আবার বেরিয়ে যেত। কোথায়, তা বীণাদেবী জিগ্যেস করেন নি কোনদিন। জিগ্যেস করে মিথ্যে কথা শুনতে কতখানি কষ্ট, তা বাবার ওকালতির সময় থেকে ভালোই জানতেন তিনি। বাবা বলতেন, যে মিথ্যে কথা সজ্ঞ্যানে স্বেচ্ছায় বলে, সে সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ফেলে ঠিক; কিন্তু যে শুনছে তার কান এড়িয়ে যায় না। মিথ্যে কথা একবার ধরে ফেললে তারপরের সত্যিগুলো এতই আবছা হয়ে যায়, যে ঘৃণা করতে শুরু হয় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে। তারপর আর ফেরা যায় না যে।
আর ফেরেনও নি তিনি। দাদা মাঝে মাঝে আসতেন, হাতে দু’পাঁচ হাজার দিয়ে চলে যেতেন। হাত ধরে বলতেন, “বিনু অনেক তো হল। এবার ফিরে আয়। বাবাও আর বেশীদিন নেই।” বীণাদেবী হাসতেন। বলতেন, “তুই বুঝিস না দাদা। বাবা ওইদিনই চলে গিয়েছেন।”
স্নানের শেষে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বীণাদেবী কপালের একপাশে লাল আঁচিলের মত দাগটা দেখেন। রাহুর দৃষ্টির মত জ্বলজ্বলে সেটা, ফর্সা ভাঁজ পড়া কপালে। অলোক শেষ কয়েক সপ্তাহে একবার কোনরকমে বাড়ি আসত। সেই কোনমতে গলা দিয়ে ভাতকটা নামিয়ে বীণার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেত সহজাত অধিকারে। তারপর এক সময় বেরিয়ে যেত। পুরনো বইয়ের গন্ধ তার গা থেকে কবেই চলে গিয়েছে। ঘাম আর মদের ক্লেদাক্ত অন্ধকারে বীণা কান পেতে শুনতেন বাইরে রেডিও চলছে, “ আকাশবাণী কলকাতা। এখন আমাদের সরাসরি অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়ে শোনাবেন স্বনামধন্য শিল্পী মধুসূদন পাল। শ্রোতারা অনুরোধ জানিয়ে ফোন করতে পারেন…”
এভাবে কয়েকমাস যাবার পর একদিন দুপুরে আবার ব্যাগ গোছাতে বসলেন বীণা। কন্ট্রাসেপ্টিভের পাতাটা রাখলেন ফ্রিজের ওপর। রাজু বলছিল অলোক নাকি সকাল থেকেই শ’দের দোকানে বসে আছে। আজ দুপুরে সে খেতে আসবে নিশ্চয়ই। ভাত বেড়ে থালায় সাজানো হল পাঁপড় ভাজা, আর একটু বড়ি দিয়ে পালংশাক। অলোক ভালোবাসে। ভাত বাড়তে বাড়তে টের পেলেন বীণা, হাতে আর শাঁখাজোড়া বাজছে না। রেডিওটা বন্ধ করে চুপ করে বসে রইলেন তিনি।
অলোক কখন ঢুকেছিল ঘরে, সময়টা বীণাদেবীর আজ আর মনে নেই। ভাত খাওয়ার শেষে অলোক সামনে বীণার হাতটা না পেয়ে ঘোলাটে চোখ তুলে তাকিয়েছিল।
“কি হল?”
“আমি আর পারছি না আলোক…”
“পারছি না মানে?”
অলোকের প্রশ্নের জবাবে বীণা উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ঘরের চাবি সমেত হাতটা।
“শাঁখা কোথায় তোমার?”
“তুমি বল…” সামান্য কাঠ হেসে চেয়েছিলেন অলোকের দিকে, “…কোথায় আমার শাঁখা? আমার নাকছাবি কোথায় অলোক? আমার কানপাশা? আর তুমি যে হারটা আমায় দেবে বলেছিলে সেটাই বা কোথায়?”
“এত যখন জিনিসের শখ তখন তোমার বড়লোক বাবার…”
“…বড়লোক বাবা তো গিয়েছেন মাসখানেকের বেশী হল। আমি বলব কোথায় জিনিসগুলো? ওই অ্যাশট্রেটার…” কথা শেষ হতে পারার আগেই মাথা চেপে ধরতে হয়েছিল বীণাকে। স্টিলের থালা, হাজার হোক ভারি জিনিস। সন্ধ্যার পর যখন আলোককে পাড়ার লোক পুলিশে দিল, তখন ঘরে আস্ত বলতে রেডিওটা।
দীর্ঘশ্বাস আসে না আর বীণাদেবীর। অন্যমনস্ক হয়ে হেসে ভাবতে থাকেন তিনি। অঞ্জলি ছাড়া এতবড় একটা শহরে কার কাছেই বা যেতেন তিনি।
স্কুলের বন্ধু অঞ্জলি। বরের একটা সামান্য মুদিখানা দোকান ছিল তার। অঞ্জলির বাবা সোনার দোকানে কাজ করতেন বলে বীণার বাবা কোনদিনই তাকে পছন্দ করেন নি। মেয়েকেও মিশতে দিতেন না সহজে। সেই অঞ্জলি।
নির্দ্বিধায় হাতদুটো ধরে চেয়েছিল সে বীণার মুখের দিকে। তারপর ব্যাগটা টেনে ঢুকিয়ে নিয়েছিল খাটের নিচে। সেই অঞ্জলি রান্না শেখাল বীণাকে। অনেক অনেক লোকের রান্না একসাথে। একটু একটু করে বারোটা বছর কাটিয়ে দিলেন বীণাদেবী।
সে যাক পুরনো কথা যত! অনেক ভেবেও বাড়ি ফেরেন নি বীণাদেবী। রান্নার কাজ থেকে শুরু করে হোম সার্ভিস, একে একে ছোট্ট একটা খাবারের দোকান। আজ বীণাদেবীর কাঁচের বাসনগুলো তাঁর নিজের। পর্দা লেগে টুংটাং শব্দ হয় টেবিলে সাজানো ফুলদানীর। না, অলোক আর ফেরে নি তাঁর কাছে। বোধহয় বুঝতে পেরেছিল ভুলগুলো।
সন্ধ্যের মুখে একদিন আবার চেনাজানা আওয়াজে একদিন বেজে উঠল রেডিওটা; “ আকাশবাণী কলকাতা। এখন আমাদের সরাসরি অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়ে শোনাবেন স্বনামধন্য শিল্পী মধুসূদন পাল। শ্রোতারা অনুরোধ জানিয়ে ফোন করতে পারেন…” ।
এর আগে কখনও সরাসরি অনুষ্ঠানে ফোন করেননি বীণাদেবী। কি মনে করে নম্বরটা মনে মনে মুখস্ত করে নেমে গেলেন নিচের দোকানে। ফোন তুলে ডায়াল করলেন।
“হ্যালো!”, এই আওয়াজটা সঞ্চালকের, চিনতে পারা যায়।
“নমস্কার, আমি বীণা মহলানবীশ বলছি…” জায়গাটার নাম আটকে গেল মুখে বীণাদেবীর। যদি চেনা কেউ শুনে ফেলে?
“হ্যাঁ বীণাদেবী, বলুন। কি অনুরোধ রাখতে পারি আমরা আপনার?”
“মধুসূদন বাবুর আমি একজন গুণমুগ্ধ শ্রোতা। ওনার সাথে কথা বলতে চাই।”
“হ্যাঁ বলুন না উনি শুনছেন। আমাদের বাকি শ্রোতাবন্ধুরাও…”
“সেটা উনি নিজমুখে বললে ভালো হয়…”
সঞ্চালক ভদ্রলোক ঠিক এমনটা আশা করে যে বসেন নি, সেটা কয়েক সেকেন্ড নীরবতায় প্রকাশ পেয়ে গেল। তারপর একটা গমগমে গলা ভেসে এল টেলিফোনের ওপ্রান্ত থেকে।
“নমস্কার। আমি মধুসূদন বলছি।”
ফোনটা প্রায় পড়ে যাচ্ছিল বীণাদেবীর হাত ফস্কে। এমনটা কি অনেক অনেক বছর আগে সেই বইমেলায় হয়েছিল? নাকি এর চেয়ে কম। কম বেশীর হিসাবে হারিয়ে যেতে থাকেন বীণা।
“হ্যালো…”
“নমস্কার। আমি আপনাকে অনেকদিন ধরে শুনে আসছি। কখনও ফোন করার ধৃষ্টতা করি নি। একটা অনুরোধ ছিল।”
“হ্যাঁ বলুন না।”
“মালকোষ বাজিয়ে শোনাবেন?”
ওপারে আবার নিস্তব্ধতা। তারপর গলা ভেসে এল, “মালকোষ যে বড্ড বড় এই কম সময়ে বাজাবার পক্ষে। আমি বরং আপনাকে একটা অন্যকিছু শোনাই? আচ্ছা আপনি কোথা থেকে কথা বলছেন জানালেন না যে…”
বীণাদেবী ফোনটা রেখে দেন। গলাটা যেন হাত বেয়ে উঠে এসে তাঁর খোঁপা খুলে দিতে চাইছিল। কোনরকমে ফোনের পয়সা দিয়ে উপরে এসে শুনলেন সঞ্চালক বলছেন, “যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বোধহয় আমাদের শেষ কলটা কেটে গেল। মধুসূদন আপনি তাহলে কি বাজিয়ে শোনাচ্ছেন আজ আমাদের শ্রোতাবন্ধুর অনুরোধে?”
উত্তরে একটা ভারি চেনা সুর বীণাদেবীর ঘর আলো করে বেজে উঠল।
“বাজিল কাহার বীণা মধুর স্বরে
আমার নিভৃত নব জীবন পরে…”
যখন বীণাদেবী নিজের মধ্যে ফিরে এলেন, তখন তাঁর চশমার কাঁচে জল জমেছে।
ফোন আর একদিন সন্ধ্যেয় বেজে উঠল। তখন বীণাদেবীর নিজের ঘরে ফোন।
“হ্যালো?”
“নমস্কার। মধুসূদন বলছি।“
“নমস্কার। আপনি এই অসময়ে…”
“বীণা আমরা কতদিন হল কথা বলছি?”
“ইয়ে সেটা তো…”
“এবার একদিন দেখা হওয়া যায় না কি? আমার বাড়ি চেতলা অগ্রণী ক্লাবের একেবারে পাশেই। আসুন না একদিন , গল্প গুজব হবে।”
“মধুসুদন আপনাকে অনেকবার বলেছি, আমার সে যোগ্যতা নেই আপনার সামনে বসার।”
ভারি মিষ্টি হাসলেন মধুসূদন, হাসি আর দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে একটা গভীর অনুভূতি ঘাড়ের নিচে সিরসির করে উঠল বীণার।
“বেশ। আজ কি রান্না করলে?”
“আদা আর মুলো দিয়ে চচ্চড়ি আর কলাইয়ের ডাল। তুমি কি খেলে?”
“কথায় কথায় যে রাত হয়ে যায়, কি কথা রাখলে বাকি…” লাইনকটা মনে ঘোরাফেরা করতে থাকত বীণার। আচ্ছা, কাল তো মধুসুদনের জন্মদিন! হঠাৎ ক্যালেন্ডার চোখে পড়ে গিয়েছিল। জিগ্যেস করলেন, “কাল তোমার জন্মদিনে কি করছ?”
“ওই বিকেলে আকাশবাণী। তারপর ঘরে একটু সামান্য মিষ্টিমুখের আয়োজন করেছি। কালই এসে পড় না।”
এ কথার আর উত্তর দিতে পারেন নি বীণা; “রাখলাম” বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
পরদিন ঠিক সাতটায় রেডিও চালিয়ে বসলেন তিনি। চুলে রজনীগন্ধার মালা, হাতে একটা উলের বল।
“ আকাশবাণী কলকাতা। এখন আমাদের সরাসরি অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়ে শোনাবেন স্বনামধন্য শিল্পী মধুসূদন পাল। শ্রোতারা অনুরোধ জানিয়ে ফোন করতে পারেন…” ।
কিছুক্ষণ কুশল বিনিময়ের পর সঞ্চালিকা মধুসূদনকে প্রশ্ন করলেন, “তাহলে আজ এই বিশেষ দিনে কি শোনাচ্ছেন শ্রোতাবন্ধুদের?”
“আসলে আজ একটা বহু পুরনো অনুরোধ রাখতে আসা আকাশবাণীর দরজায়। যিনি অনুরোধ করেছিলেন তিনি নিশ্চয়ই মনে রেখেছেন। তাঁকে উদ্দেশ্য করেই বলি, বড় দেরী হল ফিরে আসতে। কিছু যেন মনে কর না। আর আমার বাকি শ্রোতাবন্ধুদের কাছে অনুনয়, আজ আমায় অন্য কেউ অন্য কিছু বাজাতে বলবেন না। আজ আমি অপারগ।”
কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা।
মালকোষ!!??
মধুসূদন মালকোষ বাজাচ্ছেন। বীণার আঁচল হাওয়ায় লুটিয়ে পড়ল চেয়ারের হাতলে। উলের বলটা গড়িয়ে সারা ঘরময় হয়ে গেল।
বীণাদেবী সন্ধ্যার দিকে কাগজটা কোলে নিয়ে বসলেন চেয়ারে। আজ একটু পরে চালালেন রেডিওটা। প্রথমদিকে বড় কথা বলে ওরা। সোয়া সাতটা কি ঠিক হবে? হ্যাঁ সোয়া সাতটা। সেদিনও সোয়া সাতটাই ছিল। আলনা থেকে পুরনো একটা লাল সোয়েটার টেনে বের করলেন তিনি। ওপরে একটা বীণার ছবি সেলাই করা। সেলাইয়ের বাক্সটা যে কোথায় রাখলেন পরশু। আলমারি? না বোধহয় বাথরুমের দরজার পাশে টেবিলে। আজ কাগজে মধুসুদনের একটা মস্ত রঙিন ছবি দিয়েছে।
কাঁচিটা টেনে নিলেন বীণাদেবী।
কাটতে শুরু করলেন ছবিটা। তাল রেখে বেজে চলল মালকোষ।
“প্রখ্যাত সেতারবাদক শ্রী মধুসূদন পালের অকালমৃত্যুতে শোকাহত আপামর শিল্পীমহল…”
রেডিও বেজে চলল।
রেডিও বেজেই চলল।
(চলবে)
© All rights reserved by Copyright Act 2020, Department of Art and Culture, Government of India
Copyright Office, New Delhi 110025

Comments